সোমবার, ২৮ মার্চ, ২০১১

মামা কাহিনীঃ মামী নাম্বার ওয়ান।

অনেকদিন মামার সাথে দেখা নাই। সারা বিশ্বে কত ঘটনা কত কিছু ঘটে গেল। মধ্যপ্রাচ্যের সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন গুলো কঠিন ভাবে মার খেয়ে যাচ্ছে। বাহারাইনে সৌদিরা সৈন্য পাঠিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় মানুষের মাথার খুলি উড়িয়ে দিচ্ছে। লিবিয়ায় গাদ্দাফীকে মনে হচ্ছে হাটানো যাবে না, তিনি তার ভার্জিন নারী গার্ড নিয়ে এবার টিকে যেতে পারেন বলে মনে হচ্ছে। মামাকে পেলে একটু আলাপ করা যেত।

জাপানের সুনামীর ঘটনা দেখে মনে হয় কোয়ামত দিনের নমুনার একটা শস্যদানা দুনিয়াতে ঘটে গেল। রোজ কোয়ামতের দিনে কি কি হবে তার কিছু কিছু বর্ননা অনেক মমিন মুসলমান লোকেই জানে। যে সব ঘটনার বর্ননার কথা কিতাব সমুহে দেখা যায়, ঠিক তেমনি ঘটনার চোখে দেখার সাক্ষী হয়ে গেলাম, ভিডিও এবং ছবির মাধ্যমে। জাপানের সুনামী আর বাংলাদেশের আইলা তথা সুনামী আমার কাছে একই ঘটনা বলে মনে হয়। বাংলাদেশ গরীব দেশ, সরকারের নিচু মানসিকতার জন্য আইলা এতটা প্রচার পায় নাই। তবে আইলা নিয়ে পত্র পত্রিকায় কিছু খবর এখনো দেখা যায়। আইলা ঘটেছিল রাতের আধারে, সেজন্য আইলার কোন ছবি কিংবা ভিডিও আমাদের সামনে আসে নাই। সংবাদিক মামাকে পেলে একটু জ্ঞান বাড়িয়ে নেয়া যেত।

করিম টি ষ্টোরের সামনে এসে মামাকে ফোন দেই। কয়েকবার রিং বাজে, মামা ফোন ধরেন না। তদুপরি মনে হচ্ছে মামা ফোন কেটে দিয়েছেন। মনের অবস্থা যা ছিল তার থেকেও বেশী খারাপ হয়ে গেল। কাউকে ফোন দিলে এবং রিসিভ না করে কেটে দিলে মনে ভীষন কষ্ট লাগে। আর তা যদি বন্ধু স্থানীয় কেহ হয় তবে তো কষ্টের পরিমান আরো বেড়ে যায়! এটা এক ধরনের অবহেলা!

তবে নামাজের সময় কিংবা অফিসে বসের সামনে দাঁড়িয়ে কিংবা মিটিংএ থাকার সময় কেহ ফোন দিলে তা কেটে দেয়া যেতে পারে! বসের সামনে কিংবা মিটিংএ মোবাইলের রিঙ্গার অফ কিংবা বন্ধ করে যাওয়া উচিত। বসের সামনে মোবাইল বেজে উঠা এক ধরনের চরম বেয়াদপি। ভাল বস হলে বলবে, আমার কাছে আসার সময় মোবাইল বন্ধ করে আসবে। আর যদি একটু ঘাড়ের রগ তোড়া বস হয় তবে মুখের সামনেই বলে ফেলবে, এত দিনেও আপনার কমনসেন্স হল না!

চায়ের কাপ ঠোঁটের কাছে নিয়ে নানা চিন্তার মাঝে আমার সময় পার হচ্ছিলো। এমন সময় এলজি কেএস৬৬০ বেজে উঠে। আরো এ দেখছি মামা, রিং ব্যাক করেছেন।

; হ্যালো মামা, স্লামালাইকুম।
- কিরে কি খবর, কই আছস?
; মামা, ফোন দিছিলাম ধর নাই ক্যান।
- আরো তোর মামী সাথে ছিল। অফিস থেকে বের হয়ে তোর মামীকে নিয়ে মার্কেটে যেতে হয়েছিল। তোর মামীকে বাসায় নামিয়ে এখন বাসার সামনে আছি।
; তোমার যা অবস্থা মামা। সারা জীবন মামীকে ভয় পেয়ে কাটিয়ে দিলে। করিম ভাইয়ের চা দোকানের সামনে আছি, চলে আস। একসাথে চা, সিগারেট টানি।
- দাঁড়া, আমি আসছি।

মামার সাথে কথা বলে ফোন পকেটে রেখে সিগারেটের শেষাঙ্গে টান দিয়ে ফেলে দেই। মামা আসলে মামার টাকায় আবার চা খাবো এবং আর একটা ধরাবো! রাত এখন পৌনে দশটা, রাস্তায় এখনো মানুষের ভিড়। সরকার এখনো মানুষ নিয়ন্ত্রন না করতে পারলে বাংলাদেশে সুনামী লাগবে না, এমনিতেই সুনামী হয়ে যাবে!

বর্তমানে আদম শুমারী চলছে, এবার দেখা যাবে বাংলাদেশে কতজন মানুষ আছে! অনেকে বলেন ১৭ কোটির কাছাকাছি কিন্তু সংখ্যাটা শুনলে প্রধানমন্ত্রী সহ সরকারের নানা পর্যায়ে থাকা ভদ্রলোকেরা কেন জানি রাগ করে ফেলে। সরকারের নানা স্তরে বড় পোষ্টে থাকা লোকজন কেন জানি এসত্য মনে নিতে পারে না! সরকারের নানা পর্যায়ে কেন এই সংখ্যা লুকাতে চায়, এটা নিয়েও একটা গবেষণা হতে পারে এবং পিএইচডিতে থিসিস জমা দেয়া যেতে পারে!

এবার আশাকরি সঠিক সংখ্যা জানা যাবে। জনসংখ্যা নিয়ে আমাদের যে একটা ভুল বুঝা বুঝি আছে তার একটা বিহিত ব্যবস্থা হবে। সঠিক সংখ্যা জেনে সরকার বাহাদুরো তার কি করনীয় হতে পারে সে দিকে প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারবে। তবে কোন জানি মনে হয়, সরকারের পরিসংখ্যান মন্ত্রণালয় হিসাবে একটা ঘপলা করেই ফেলবে। পরিবার মন্ত্রনালয়ের যোগসাজসে কয়েক কোটি জনসংখ্যা লুকিয়ে রিপোর্ট দিবে! এতে সরকার বাহাদুরের ভাষনে বলতে ভাল শুনাবে যে, আমাদের স্বাসনামলে দেশে জনসংখ্যা তেমন বাড়ে নাই! জনসংখ্যা যা বাড়ার তা বেড়েছে, গত চার দলীয় স্বাসনামলে।

মোবাইলের রিং বেজে উঠায় চিন্তায় ছেদ পড়ে। আরো এ যে মামার নাম্বার!

; জ্বী মামা। এত দেরী করছ ক্যান।
- আমি আসতে পারব না। পরে দেখা হবে।
; কেন, কি হল।
- তোর মামীকে নিয়ে মার্কেটে গিয়েছিলাম, তিনি তার কাপড় সহ একটা ব্যাগ নাকি কোন দোকানে ফেলে এসেছেন। তা আনতে তোর মামীকে নিয়ে আবার মার্কেটে যেতে হবে।
; কিন্তু...

আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মামা ফোন কেটে দিলেন। কিন্তু এখন যে রাত সোয়া দশটা, চৌদ্দ দলীয় স্বাসনামলে রাত আট'টার পর সকল দোকান পাট বন্ধ রাখার যে নিদের্শ আছে তা মামাকে মনে করিয়ে দিলে ভাল হত!

প্রথম প্রকাশঃ চতুরমার্ত্রিক, তারিখঃ ১৮ মার্চ ২০১১, ২:০৫ অপরাহ্ন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন