রবিবার, ৫ জুন, ২০১১

মামা কাহিনীঃ বাড়ীওয়ালার ছেলে ভেবে হয়েছিল ভুল!

অনেক দিন মামার সাথে দেখা হয় না। আমরা দুইজনেই বয়সের সাথে তাল মিলিয়ে ব্যস্ততা বাড়িয়ে তুলছি! ইদানিং মামাকেও পত্রিকায় বেশী বেশী রিপোর্ট লিখতে হয়। সম্পাদক সাহেব নাকি মামাকে বলে দিয়েছেন, আপনি এখন নামিদামি ব্যক্তিত্বে পরিনত হয়েছেন, টেলিভিশনের টকশোতে আপনার উপস্তিতি প্রায় দেখা যায়, এখন প্রতি সাপ্তাহে একটা করে লিড ইনভেস্টিগেশন নিউজ লিখতে হবে। এতে প্রত্রিকার কাটতি বাড়বে। সেই করে মামার এখন এসাইনমেন্ট, বাংলাদেশের শেয়ার বাজার। বিষয়টা মামার পড়াশুনার সাথে মিলে যায়, মামাও এই বিষয়ে ভাল মতামত দিতে পারেন। তবে টকশোতে শুধু এই বিষয়ে মতামত দিলে চলে না, সরকারের সমালোচনা না করলে ভাল টকশোবিদ হতে পারা যায় না। সরকারের পক্ষে কথা বলে অনেক টকশোবিদ এখন দালালে পরিনত হয়েছেন!

সম্পাদক সাহেব নাকি আরো বলেছেন, সিনেমার নায়ক নায়িকাদের চেয়ে টকশোর আলোচকরা কম নয়! সিনেমার নায়ক নায়িকারা মানুষকে শুধু বিনোদন দেয়! কিন্তু টকশোর আলোচকরা বিনোদনের পাশাপাশি সমাজ পরিবর্তনেও ভুমিকা রাখে, সমাজের গন মতামতকে এক সুতায় গেঁথে তুলতে পারেন। মামা স্বাভাবিক ভাবে সম্পাদক সাহেবের কথায় প্যাঁচ ধরতে গিয়ে থেমে গিয়েছিলেন! আরো ব্যাটা, সিনেমায় নায়ক নায়িকা আছে ভাল কথা, টকশোতে নায়িকা পেলি কোথায়? এত বড় একটা জনসংখ্যায় ভরা দেশে এখনো একজনও মহিলা টকশো আলোচক নেই! মামার বলেতে ইচ্ছা হয়েছিল, রাত বারটার পর টিভি দেখিস!

আসলে সব কথা সব জায়গায় বলা চলে না। চাকুরী করতে গেলে নিজকে আরো বেশী নতজানু মানুষ করে তুলতে হয় এবং সেই চাকুরীজীবী যদি বিবাহিত হয়, তা হলে তো কথাই নেই। আমার মামার হয়েছে সে দশা। টকশোতে আর কয় পয়সা পাওয়া যায়! মামী সহ ছেলে পুলেরা একটু টিভিতে দেখে মজা পায় মাত্র! যে সব বন্ধুদের সাথে দেখা হয় না, তারা টিভিতে দেখে ফোন করে। ব্যস এইতো। চাকুরীর টাকাই সংসার চালাতে হয়। লিখতে না পারলে, পেটে ভাত জুটবে না এটাই চরম বাস্তবতা।

আধ ঘন্টা আগে মামাকে ফোন করেছিলাম। আমি যথারীতি আমাদের গলির মুখে। মামা বলেন - রিক্সায় আছি, আসছি। দাঁড়া, তোকে অনেক দিন দেখি না। মামার সাথে দেখা করার লোভ সামলাতে পারছি না। আমার বাসায়ও কিছু তাড়া আছে - থাক। কিছু দিন পর পরই মামার সাথে একটা সিগারেট চা আড্ডা না হলে মনটা ভাল যায় না। আর মামার সাথে দেখা হলে, নিজে যেমন নিজের মনের কথা বলতে পারি, পাশাপাশি মামাও না ধরনের কথা বলেন। দেশ নিয়ে মামার সাথে তেমন আলোচনা করি না। পরিবারের আলোচনা সহ মহল্লার নানা বিধ কথামালা থাকে বেশী। মামার কথায় নানা যুক্তি থাকে।

রিক্সা এসে দাঁড়ায়। মোটা মানিব্যাগ বের করে মামা ভাড়া পরিশোধ করে আমার সাথে হাত মিলান।
- কি খবর? কেমন আছিস?
; এই তো চলছে। আছি বেঁচে।
- শুনলাম তুই চাকুরী বদলে ফেলবি।
; কি আর করবো? এত কম টাকায় আর পারছি না। সপ্তাহে ছয় দিন, দিনে দশ ঘন্টা করে আর সইতে পারছি না। ভাবছি নূতন কেন জায়গা খুঁজে নিব।
- চাকুরী বেশী বদলানো ভাল নয়। এতে পরবর্তিতে সমস্যায় পড়ে যাবি।
; না বদলে উপায় কি বলো। না খেয়ে থাকব কি করে? বাজারের জিনিষ দামের ব্যাপারটা দেখছো। গত দেড় বছরে আমার এক টাকাও বেতন বাড়ে নাই অথচ বাজারের অবস্থা দেখ। বছর খানেক আগেও মাসে বাজার খরচ ছিল পাঁচ-সাড়ে পাঁচ হাজার টাকার মত। এখন দশ হাজারেও কুলাচ্ছে না।

সিগারেটে আগুন ধরিয়ে আমরা করিম চাচার চা দোকানের দিকে যেতে থাকি।
- তোর মত অবস্থা ঢাকা শহরের অনেকেরই। সবাই একটা ক্রাহী মদুসুদন অবস্থার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। প্রায় ত্রিশ হাজার টাকার মত বেতন পেয়ে আমাকেও তোর মোটা মামীসহ ছেলে মেয়ে নিয়ে একটা কষ্টকর জীবন পার করতে হচ্ছে। সাংবাদিকতার জন্য অনেকের কাছে যেতে হয়। সব দেখছি।
; টিভিতে টক শোতে তো বেশ ভাল ভাল কথা বল। শেয়ার মার্কেটে মার খাওয়া মানুষের পক্ষেও শক্ত করে কিছু বল না।
- দেশের উঠতি আলোচক হিসাবে এত হার্ড লাইনে সরকার বিরোধী কথা বলা যায় না। ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে যাবে, পরে আর কেহ ডাকবে না।

মামা কথা মিথ্যা বলেন নাই। যেই দেশ সেই বেশ। আমাদের দেশে সত্যের ভাত নেই। ক্ষমতায় গেলে সব সত্য মিথ্যা মনে হয়। মাটিতে পা পড়ে না। তবু আমি সাফাই গাই -
; আরো দূর। তুমি আছ ভুল পথে। সত্য কথার জুড়ি নাই, সত্য বলে মরে যাওয়াও ভাল।
- তোর বয়স হলেও এখনো কাঁচা রয়ে গেছিস। তোর মামীর মত এখনো তুই স্থুল বুদ্দি নিয়ে আছিস!
; কেন মামী আবার কি করল?
- প্রেম করে বিবাহের তের বছর পার হয়ে যাচ্ছে। গতকাল রাতে তোর মামী বলে - আমাকে ঢাকা শহরের বাড়ীওয়ালার ছেলে ভেবে সে জীবনে প্রথম ভুল করেছিল।

চা'র কাপে চুমুক দিয়ে মামা আমার দিকে তাকান। মামা বলেন - জীবন ঢাকা শহরে এখন খুবই কঠিন। উপর থেকে যা দেখা যায় তা বেশীর ভাগ সময়ে মিথ্যা হয়। সাংবাদিকতা, টকশো নিয়ে আছি বটে। আর্থিক জটিলতা থেকে এখনো মুক্তি পাই নাই আর সে জন্য অনেক সংকীনর্তা থেকে এখনো মুক্তি মিলে নাই। ঢাকা শহরের বেশীর মানুষের এখন এমন এক মরন দশা চলছে।

প্রথম প্রকাশঃ চতুর্মাত্রিক(তারিখঃ ২৯ মে ২০১১, ৯:৪৮ অপরাহ্ন)

বুধবার, ২০ এপ্রিল, ২০১১

মামা কাহিনীঃ ইশারা ভাষা।

আবারো অনেক দিন আমার মহল্লার মামার সাথে দেখা নাই। আজকাল আমাদের আড্ডায় আর কারোই মন বসছে না। নানাবিধ ঝামেলায় জীবন একদম শেষ। মরলেই বাঁচি অবস্থা। করিম টি ষ্টোরের সামনে নেমে মামাকে ফোন করি।

; হ্যালো মামা, কি খবর। কেমন আছ? খবর কি।
- তুই কোন খবরের কথা বলছিস।
; নাহ অনেকদিন তোমার সাথে দেখা নেই। তুমি কেমন আছ জানতে চাইলাম আর কি। এবারে নববর্ষেও দেখা হল না, একটা ফোনও দিলে না। দিন দিন কেমন স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছ।
- তুই কোথায় আছিস এখন।
; মামা, আমি চা দোকানের সামনে আছি।
- তুই দাঁড়া আমি কিছুক্ষনের মধ্য চলে আসছি। একসাথে সিগারেট টানব।

এই হচ্ছে মোবাইলের সুবিধা। মোবাইল না থাকার আগে আড্ডায় এক এক জনকে বাসায় বাসায় গিয়ে ডেকে আনতে হত। আমাদের ছেলে মেয়েরা হয়ত একদিন বিশ্বাসই করবে না যে, বাসার সামনে গিয়ে আমরা বিশেষ শিষ দিলে, বন্ধুরা নেমে আসত। মোবাইলের যুগে ওই শিষের দরকার হচ্ছে না - ম্যাসেজ, মিস কল কিংবা ডাইরেক্ট কল! তবে মোবাইলের কারনে মিথ্যা অবস্থান জানানোর প্রবনতা আমাদের সমাজে চরম বেড়ে গেছে।

আবুল হোটেলের সামনে বাসে বসে অফিসে ফোনে বলছে, স্যার আমি কাকরাইলে আছি। বিএনপি’র মিছিলের কারনে রাস্তা ঘাট বন্ধ। বিরাট জ্যাম পড়েছে, বসে আছি। যাত্রীরা উঁকিজুকি দিয়ে বিএনপির মিছিল খুঁজেন। কিছু না দেখে, একে অপরের দিকে তাকিয়ে দেখেন। কেহ কিছু বলেন না। বলে আর কি হবে, এই সমাজের কলিজাতে পোকায় বাসা বেঁধেছে! যে দেশে মন্ত্রী, এমপিগন মিথ্যা বলেন, সেই দেশের সাধারন কেমন হবে? সাধারন মানুষের স্বার্থের দিকে যে সরকার তাকায় না, তাদের দেশে আর কি ভাবনার আছে? যেখানে একজন মন্ত্রী বলেন, ওদের বিচার করা যাবে না কারন তারা শক্তিশালী। এখানে চোরেরাই শক্তিশালী! বটে।

- কি রে, কি ভাবছিস? গায়ের উপর দিয়েতো রিক্সা চলে যাবে।

মামার কথায় এই বাস্তব দুনিয়াতে ফিরে আসি। মামার সাথে হ্যান্ডশেক করি। খরখরে হাতের তালু, আঙ্গুল গুলো ক্যামিক্যাল মিশানো কলা শুকিয়ে গেলে যেমনটা লাগে!

; মামা, মোবাইলের কথা ভাবছিলাম। কি এক যন্ত্র বানাইলো! দেখো, তোমার বাসায় না যেয়ে তোমাকে ডেকে নিয়ে এলাম। তোমার বাসার কেহ টের পেল না।
- হা, আবিস্কারের বিশাল কেরামতি। আগামী পঞ্চাশ বছর পর কি আসবে কে জানে।
; মামা, মোবাইল ছাড়া দিনগুলোর কথা মনে আছে। বাসার নীচে যেয়ে তিন তালি! তালিতে কাজ না হলে বিশেষ শিষ।
- মনে থাকবে না কেন। এই আর কয় দিন আগের কথা! সম্রাট হুমায়ুনের আমলের সব ঘটনাতো নয়!
; মোবাইল থাকলে তোমাকে জুলেখাকে হারাতে হত না! জুলেখার পিতা জুলেখাকে আটকে রাখতে পারত না। এসএমএস দিয়ে জুলেখাকে প্রতিদিন অবস্থান জানিয়ে দিতে পারতে!

মামা সিগারেট ধরান। আমারো কি হল, জুলেখার নামটা নিয়ে নিলাম! আসলে মামাকে ক্ষেপাতে আমি মাঝে মাঝেই জুলেখার নাম নেই। জুলেখার নাম শুনলেই মামা একটু নরম দিলের মানুষে পরিনত হয়ে যান। আমাদের অনেকের জন্য চা সিগারেট ফ্রী হয়ে যায়।

; তোর কি আমার ইশারা ভাষার কথা মনে আছে? আমাদের বাড়ীর পিছনের মাঠ শেষে জুলেখাদের চার তলা বাড়ী ছিল। জুলেখারা থাকত চার তলার পূর্ব পাশের ফ্লাটে। আমাদের প্রেমের সব জানাজানি হয়ে যাবার পর, জুলেখাকে যখন আর বের হতে দিত না কিংবা বের হলে সঙ্গে কেঊ না কেউ থাকত। তখন আমি আর জুলেখা ইশারা ভাষা শিখে নিয়েছিলাম। দুটো ইশারা ভাষার বই কিনেও ছিলাম।

- এখন আবশ্য বিটিভিতে মাঝে মাঝে ইশারা ভাষা দেখি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী কোথায়ও ভাষন দিলে পাশে একজন দাঁড়িয়ে ইশারা ভাষায় ইশারা দিতে থাকেন। মনে হয় কঠিন ভাষা। শুধু হাত মুখ আর চোখের অভিপ্রায়ে কাউকে কিছু নিখুত করে বুঝিয়ে দেয়া অনেক কষ্টের।

; জুলেখা আর আমি তো ইশারা ভাষা দিয়েই প্রায় দুই বছর প্রেম চালিয়ে গিয়েছিলাম। ইস তখন মোবাইল ছিল না। তা হলে জুলেখা আর আমিই সংসারি হতাম হয়ত। তোর মোটা মামী এসে জীবনটা ফাতা ফাতা বানাতে পারত না।

মামা বলেন, আজ চলি রে। বাসা থেকে বার বার কল আসছে। ঘড়িতে তখন রাত সাড়ে এগারটা। আমার কোপালেও আজ শনি লিখা হয়ে গেছে! ইশারা ভাষাই ভাল ছিল! দেখা না গেলে বুঝানো যেত না!

প্রথম প্রকাশ। চতুর্মাত্রিক (তারিখঃ ১৫ এপ্রিল ২০১১, ৯:৪৪ অপরাহ্ন)

সোমবার, ২৮ মার্চ, ২০১১

মামা কাহিনীঃ কঠিন ভালবাসা নাকি অন্য কিছু!

চিপাগল্লি দিয়ে বের হতেই মহল্লা'র বড় রাস্তা। আমাদের মহল্লার মাসুম মামাকে দেখি করিম ভাইয়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছেন। আমি এগিয়ে যাই। অনেক দিন পর মামার সাথে দেখা। উনি অবশ্য আমার আপন মামা না। মহল্লার সবাই ওনাকে মামা ডাকেন আমিও ডাকি। তবে আমার সাথে ওনার মতের মিল একটু বেশী। আমরা নানা মতে প্রায় এক মত থাকি। মহল্লার নানা বিষয়ে মামার পাশে পাশে আমি থাকি। এই আর কি।

; মামা, কি অবস্থা! মাথার চুলতো পালিয়ে যাচ্ছে।
- আর বলিস না, তোর মামীর বদ দোয়া লাগছে। তোর মামী আমাকে আর চুলওযালা দেখতে চায় না!
; বলেন কি মামা। কেন?
- বলতো দেখি, আমি হ্যান্ডসাম থাকলে তো মামীর কি? তোর মামী আমাকে আর সুদর্শন দেখতে চায় না। তার জন্য নাকি প্রথমে চুল চলে যাওয়া দরকার। টাকা মাথার ছেলেদের দিকে নাকি কোন মেয়ে ফিরেও চায় না! তোর মামী চায়, আমার দিকে যেন কোন মেয়ে চোখ না দেয়।

আমি কিছুটা অবাক হলেও মামাকে গিয়ারাপ করি। আসলেই মাসুম মামার চুল গত ছয় মাসে অনেক চলে গেছে।
; তো মামা তুমি নিজেও কি চুল না পড়ার জন্য কোন ব্যবস্থা নিচ্ছ না! বাজারে কত কি পাওয়া যায়। কত কবিরাজ আছে।
- না রে, ভাবছি চুল পড়া বন্দের জন্য আমি আর কোন ব্যবস্থা নিব না।
; তা হলে তো তোমার দিন ফুরাবে! মহল্লায় মামা থেকে নানা হয়ে যাবে।
- আমি নানা হয়ে গেলেও কোন আপত্তি নাই। তবে তোর মামীকেও দেখে নিব।
; সে আবার কি!
- আমিও তোর মামীর জন্য একটা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি! তোর মামীকে মোটা মহিলা বানাবো। আমার দিকে কেহ না তাকালে তার দিকেও কেহ তাকাবে না। তোরা ডাকবি 'মোটা মামী'!

আমি হাসতে থাকি।
; মামা, মামী যেমন তোমাকে ভালবাসে তুমিও তেমনি মামীকে ভালবাস! তোমাদের এ ভালবাসা কঠিন ভালবাসা নাকি অন্য কিছু!

প্রথম প্রকাশঃ চতুরমার্ত্রিক তারিখঃ ১১ আগষ্ট ২০১০, ১২:২৫ পূর্বাহ্ন

মামা কাহিনীঃ উত্তর জানা আছে কি!

অফিসে যাব বলে বাসা থেকে বের হয়েছি। মহল্লার গলির মুখ দিয়ে বের হতেই মাসুম মামার সাথে দেখা। করিম টি স্টলে চা খাচ্ছেন, হাতে সিগারেট। চান রাতে দেখা হয়েছিল এর পর আর দেখা নাই। ঈদ গত ছয় দিন আজ। ঢাকা শহরটা এখনো জমে উঠে নাই। শহরের যান চলাচল স্বাভাবিক, যানযট নাই। ফুটপাতে কোন ভিক্ষুক কিংবা হকার নেই। কি সুন্দর! ঈদ মুবারক বলে মামার দিকে হাত বাড়াই। কোলাকুলি করে নিতে চাই। মামা বললেন -

; কিরে, গ্রামের বাড়িতে ঈদ করে কবে এলি?
- মামা, ঈদ ঢাকাতেই করেছি। ঈদের পর দিন বাড়ীতে গিয়ে গাছপালা দেখে এলাম। গ্রামে এখন সবুজের সমারোহ। যে দিকে চোখ দিবেন শুধু সবুজ আর সবুজ। মনে ভীষন শান্তি পাবেন। মামা, আপনাকে তো আমি অনেক আগেই বলে আসছি আমাদের বাড়িতে বেড়াতে যেতে। বড় রাস্তা থেকে নেমেই আমাদের গ্রাম! ছবির মতন।
; তোদের বাড়ীতে আমার যাওয়ার ইচ্ছা আছে। সবুজ আমারো ভাল লাগে। কিন্তু তোর মামীর পারমিশন কে নেবে?
- বিবাহের এত বছর পার করে এলেন, এখনো মামী ছাড়া কিছু বুঝলেন না।
; ঠিক তা না রে! কোথায় যেন আটকা পড়ে আছি।

মাসুম মামার মামীর প্রতি ভালবাসা আমার জানা আছে। সহজ সরল আমাদের মহল্লার এ মামা মামীকে ভীষন ভাল বাসেন। দুজনে রিক্সায় উঠে পড়ি। মামাও অফিসে যাবেন। মামাকে কাওরানবাজারে নামিয়ে আমি অফিসে চলে যাব। রিক্সার জন্য এখন সকল পথ খোলা দেখছি। ঢাকার সব রাস্তাই চলাচল করতে পারে। কিন্তু আর কত দিন? মনে হয় আগামী শনিবার থেকে আবার শুরু হবে আমাদের শহুরে জীবন! মামা সিগারেট টানছেন পায়ের উপর পা দিয়ে। অর্ধেক শেষ করে আমাকে দিবেন।

মামার সাথে আমার নানাবিধ মিল আছে। আমাদের একটা ভাল মিল, মামার অফিস শুরু হয় বেলা ১২টা থেকে আর আমারো তাই। আমি যেমন রাত জাগি মামাও তেমনি রাত জাগেন। কত গভীর রাতে মামার সাথে ইয়াহু চ্যাটে চ্যাট করেছি।
- মামা, ঢাকা শহরটা এখন তুমি কেমন উপভোগ করছ।
; এমনই তো শান্ত ঢাকা শহর থাকার কথা ছিল। জনসংখ্যার চাপে শহরটা একদম শেষ হয়ে গেল রে। ছোট একটা শহরের মালিক কোটি কোটি লোক! আফসোস আমরা এ শহরটার জন্য কিছুই করতে পারলাম না। জানিস আমাদের একটা পরিসংখ্যানও নেই, কত লোক এ শহরে আছে!
- আচ্ছা মামা, আপনি তো সংবাদিক। আমাকে কি বলতে পারেন আমাদের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ডে টু ডে নানা মন্ত্রনালয় থেকে কি কি রির্পোট পেয়ে থাকেন। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর কি একবারো জানতে ইচ্ছা হয় না, তার দেশে কত ডাক্তার, কত ঈঞ্জিনিয়ার, কত উকিল, কত কবিরাজ আছে? কত লোক আজ সকালে জন্মেছে, কত লোক আজ মরেছে?

মামা আমার খামোশ খেয়ে আছেন। আমার দিকে তাকান। মামা মনে হয় রেগে গেছেন। আমাদের রিক্সা কাওরানবাজারে মামার অফিসের কাছা কাছি চলে এসেছে। মামা নেমে পকেটে হাত দেন, আমি রিক্সাচালকে চালাতে বলি।

- মামা, রাতে ইয়াহুতে আসবেন।

প্রথম প্রকাশঃ চতুরমার্ত্রিক তারিখঃ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১০, ৪:২৪ অপরাহ্ন

মামা কাহিনীঃ মামী নাম্বার ওয়ান।

অনেকদিন মামার সাথে দেখা নাই। সারা বিশ্বে কত ঘটনা কত কিছু ঘটে গেল। মধ্যপ্রাচ্যের সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন গুলো কঠিন ভাবে মার খেয়ে যাচ্ছে। বাহারাইনে সৌদিরা সৈন্য পাঠিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় মানুষের মাথার খুলি উড়িয়ে দিচ্ছে। লিবিয়ায় গাদ্দাফীকে মনে হচ্ছে হাটানো যাবে না, তিনি তার ভার্জিন নারী গার্ড নিয়ে এবার টিকে যেতে পারেন বলে মনে হচ্ছে। মামাকে পেলে একটু আলাপ করা যেত।

জাপানের সুনামীর ঘটনা দেখে মনে হয় কোয়ামত দিনের নমুনার একটা শস্যদানা দুনিয়াতে ঘটে গেল। রোজ কোয়ামতের দিনে কি কি হবে তার কিছু কিছু বর্ননা অনেক মমিন মুসলমান লোকেই জানে। যে সব ঘটনার বর্ননার কথা কিতাব সমুহে দেখা যায়, ঠিক তেমনি ঘটনার চোখে দেখার সাক্ষী হয়ে গেলাম, ভিডিও এবং ছবির মাধ্যমে। জাপানের সুনামী আর বাংলাদেশের আইলা তথা সুনামী আমার কাছে একই ঘটনা বলে মনে হয়। বাংলাদেশ গরীব দেশ, সরকারের নিচু মানসিকতার জন্য আইলা এতটা প্রচার পায় নাই। তবে আইলা নিয়ে পত্র পত্রিকায় কিছু খবর এখনো দেখা যায়। আইলা ঘটেছিল রাতের আধারে, সেজন্য আইলার কোন ছবি কিংবা ভিডিও আমাদের সামনে আসে নাই। সংবাদিক মামাকে পেলে একটু জ্ঞান বাড়িয়ে নেয়া যেত।

করিম টি ষ্টোরের সামনে এসে মামাকে ফোন দেই। কয়েকবার রিং বাজে, মামা ফোন ধরেন না। তদুপরি মনে হচ্ছে মামা ফোন কেটে দিয়েছেন। মনের অবস্থা যা ছিল তার থেকেও বেশী খারাপ হয়ে গেল। কাউকে ফোন দিলে এবং রিসিভ না করে কেটে দিলে মনে ভীষন কষ্ট লাগে। আর তা যদি বন্ধু স্থানীয় কেহ হয় তবে তো কষ্টের পরিমান আরো বেড়ে যায়! এটা এক ধরনের অবহেলা!

তবে নামাজের সময় কিংবা অফিসে বসের সামনে দাঁড়িয়ে কিংবা মিটিংএ থাকার সময় কেহ ফোন দিলে তা কেটে দেয়া যেতে পারে! বসের সামনে কিংবা মিটিংএ মোবাইলের রিঙ্গার অফ কিংবা বন্ধ করে যাওয়া উচিত। বসের সামনে মোবাইল বেজে উঠা এক ধরনের চরম বেয়াদপি। ভাল বস হলে বলবে, আমার কাছে আসার সময় মোবাইল বন্ধ করে আসবে। আর যদি একটু ঘাড়ের রগ তোড়া বস হয় তবে মুখের সামনেই বলে ফেলবে, এত দিনেও আপনার কমনসেন্স হল না!

চায়ের কাপ ঠোঁটের কাছে নিয়ে নানা চিন্তার মাঝে আমার সময় পার হচ্ছিলো। এমন সময় এলজি কেএস৬৬০ বেজে উঠে। আরো এ দেখছি মামা, রিং ব্যাক করেছেন।

; হ্যালো মামা, স্লামালাইকুম।
- কিরে কি খবর, কই আছস?
; মামা, ফোন দিছিলাম ধর নাই ক্যান।
- আরো তোর মামী সাথে ছিল। অফিস থেকে বের হয়ে তোর মামীকে নিয়ে মার্কেটে যেতে হয়েছিল। তোর মামীকে বাসায় নামিয়ে এখন বাসার সামনে আছি।
; তোমার যা অবস্থা মামা। সারা জীবন মামীকে ভয় পেয়ে কাটিয়ে দিলে। করিম ভাইয়ের চা দোকানের সামনে আছি, চলে আস। একসাথে চা, সিগারেট টানি।
- দাঁড়া, আমি আসছি।

মামার সাথে কথা বলে ফোন পকেটে রেখে সিগারেটের শেষাঙ্গে টান দিয়ে ফেলে দেই। মামা আসলে মামার টাকায় আবার চা খাবো এবং আর একটা ধরাবো! রাত এখন পৌনে দশটা, রাস্তায় এখনো মানুষের ভিড়। সরকার এখনো মানুষ নিয়ন্ত্রন না করতে পারলে বাংলাদেশে সুনামী লাগবে না, এমনিতেই সুনামী হয়ে যাবে!

বর্তমানে আদম শুমারী চলছে, এবার দেখা যাবে বাংলাদেশে কতজন মানুষ আছে! অনেকে বলেন ১৭ কোটির কাছাকাছি কিন্তু সংখ্যাটা শুনলে প্রধানমন্ত্রী সহ সরকারের নানা পর্যায়ে থাকা ভদ্রলোকেরা কেন জানি রাগ করে ফেলে। সরকারের নানা স্তরে বড় পোষ্টে থাকা লোকজন কেন জানি এসত্য মনে নিতে পারে না! সরকারের নানা পর্যায়ে কেন এই সংখ্যা লুকাতে চায়, এটা নিয়েও একটা গবেষণা হতে পারে এবং পিএইচডিতে থিসিস জমা দেয়া যেতে পারে!

এবার আশাকরি সঠিক সংখ্যা জানা যাবে। জনসংখ্যা নিয়ে আমাদের যে একটা ভুল বুঝা বুঝি আছে তার একটা বিহিত ব্যবস্থা হবে। সঠিক সংখ্যা জেনে সরকার বাহাদুরো তার কি করনীয় হতে পারে সে দিকে প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারবে। তবে কোন জানি মনে হয়, সরকারের পরিসংখ্যান মন্ত্রণালয় হিসাবে একটা ঘপলা করেই ফেলবে। পরিবার মন্ত্রনালয়ের যোগসাজসে কয়েক কোটি জনসংখ্যা লুকিয়ে রিপোর্ট দিবে! এতে সরকার বাহাদুরের ভাষনে বলতে ভাল শুনাবে যে, আমাদের স্বাসনামলে দেশে জনসংখ্যা তেমন বাড়ে নাই! জনসংখ্যা যা বাড়ার তা বেড়েছে, গত চার দলীয় স্বাসনামলে।

মোবাইলের রিং বেজে উঠায় চিন্তায় ছেদ পড়ে। আরো এ যে মামার নাম্বার!

; জ্বী মামা। এত দেরী করছ ক্যান।
- আমি আসতে পারব না। পরে দেখা হবে।
; কেন, কি হল।
- তোর মামীকে নিয়ে মার্কেটে গিয়েছিলাম, তিনি তার কাপড় সহ একটা ব্যাগ নাকি কোন দোকানে ফেলে এসেছেন। তা আনতে তোর মামীকে নিয়ে আবার মার্কেটে যেতে হবে।
; কিন্তু...

আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মামা ফোন কেটে দিলেন। কিন্তু এখন যে রাত সোয়া দশটা, চৌদ্দ দলীয় স্বাসনামলে রাত আট'টার পর সকল দোকান পাট বন্ধ রাখার যে নিদের্শ আছে তা মামাকে মনে করিয়ে দিলে ভাল হত!

প্রথম প্রকাশঃ চতুরমার্ত্রিক, তারিখঃ ১৮ মার্চ ২০১১, ২:০৫ অপরাহ্ন

সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

মামা কাহিনীঃ হোয়াট এ মিসকল!

ঈদের পর মামার দেখা নাই। ঈদের আগের দিন চান রাতে গরু বাজারে মামার সাথে শেষ দেখা হয়েছিল। আমি গরু হাটে ঢুকছি আর মামা গরুর দড়ি হাতে বের হচ্ছিলেন। এবার কম টাকায় ভাল গরু কিনেছিলেন মামা। এবার ঈদের আগের দিন গরুর দাম ভাল ছিল। গত বছর ঈদের আগের দিন গরু বাজারে গিয়ে ধরা খেয়েছিলেন। বেশী দামে বাছুর টাইপ একটা গরু নিয়ে এসেছিলেন। মামী নাকি গরু দেখে বেজায় খেপে গিয়েছিলেন! চিপা গল্লির মাথায় মহল্লার করিম টি ষ্টোরে মামার সাথে দেখা। যথারীতি ডান হাতে চা কাপ, বাম হাতে সিগারেট।

; মামা, দেখা নাই অনেকদিন। কেমন আছ? কোরবানীতে এবার মামী খুশি ছিলেন তো! এবার গরু দেখে মামী কেমন খুশী হল।
- ধুর, কি যে কস। তোর মামীর মন! উট কিনে দিলেও ভরবে না। হাতী কোরবানীর ব্যবস্থা হলে ভাল হত।
; তা, এবার আবার কি হল।
- কয়, আরো মধ্য রাতে কিনলে নাকি অনেক সস্তা পাওয়া যেত।
; মামা, মামী কিন্তু কথা মন্দ বলেন নাই। এবার ঈদের দিনেও হাটে গরু ছাগল ছিল। বলতে গেলে ভাল দাম। ত্রিশ হাজারের গরু ছিল দেখার মত।

মামা কথার মোড় অন্য দিকে ঘুরান। আমার কুশলাদি জানতে চান। চান্স পেয়ে আমিও মামার হাতের সিগারেটে ভাগ বসাই। আজ দিনভর অনেক চা পান করেছি। এখন আর নয়। হঠাত মামার ফোন বেজে উঠে। বার বার মোবাইল বেজেই চলছে। মামা ধরছেন না। এক সময় অনেক রিং হয়ে মোবাইল থেমে যায়।

; কি ব্যাপার মামা, ফোন ধরলে না যে!
- তোর মামীর ফোন ছিল।
; কিন্তু এতবার বাজলো তাতে তো তোমার ফোন ধরা দরকার ছিলো।
- না, এটা তোর মামীর মিস কল!
; মানে! মামা, এটা কি করে মিস কল হয়! মিস কল মানে তো এক রিং কিংবা হাফ রিং বাজতেই বন্ধ হয়ে যাওয়া।

তারপর পত্রিকা অফিসে কাজ করা আমাদের মহল্লার বিজ্ঞ মামা যা বললেন তাতে আমার আক্কেল গুড়ুম। মামী নাকি বলে দিয়েছেন, তিনি যতবারই রিং দেন বা দিবেন, তাই নাকি মিস কল! ধরা যাবে না, কলব্যাক করতে হবে। মামী নাকি মামাকে আরো বলেছেন, তুমি কি আমার প্রেমিক নাকি যে আমি তোমাকে এক রিং বা হাফ রিং দিয়ে কেটে দিব!

প্রথম প্রকাশঃ চতুর্মাত্রিক(তারিখঃ ২৩ নভেম্বর ২০১০, ৮:৫০ অপরাহ্ন)

মামা কাহিনীঃ মনের পথে যায় না যে জন!

৩১শে ডিসেম্বর রাতে মামার সাথে দেখা করা আমার পুরানো একটা রেওয়াজ। যত রাতই হউক না কেন। বছরের শেষ দেখা, শেষ আড্ডা মারি। দুইজনে মিলে করিম টি ষ্টোরে চা খাই, সিগারেট টানি। এবার মামাকে মোবাইলে বললাম, মামা আমি অফিস শেষে রাত এগারটায় থাকব, তুমি এসে যাবে। মামা হা বলেও এলেন না। অনেকক্ষন অপেক্ষা করে আমি একাই চা সিগারেট টেনে বাসায় ফিরি। মনটা মামার প্রতি ভীষন বিল্লা হয়ে আছে। নিয়ম ভংগ করা মামার ঠিক হয় নাই। নিয়ম মানাই মানষের কাজ।

গতরাতে আমাদের চিপা গলির মাথায় মামার সাথে দেখা। না দেখার ভান করে পাশকেটে আমি বাসার দিকে পা বাড়াই। নিয়ম ভাংগা মামার সাথে আমিও নিয়ম ভাংতে চাই। এত দিনের একটা নিয়ম কি করে মামা ভাংতে পারে।

; কি রে কই যাস। তোর জন্য দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি আর তুই না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছিস।

মামার কথার মনের সমস্ত দুঃখ হাওয়া হয়ে উড়ে যায়। যেন এই মাত্র দেখেছি এমন ভাব করে মামাকে সালাম দেই। আরে মামা, কেমন আছ? তোমার উপর রেগে আছি তাই চলে যাচ্ছিলাম। বছরের শেষ দিন দেখা করবে বলেও দেখা করলে না।

; তোর মামীর জ্বালায় বের হতে পারি নাই।
- মানে।
; তোর মামীর সাথে সংসারের সময় যত বাড়ছে, মনে হয় তোর মামী ততই বেশী বেশী দারোয়ানীর কাজ করছে। বর্তমান সময়ে এ এক নুতন মহা জ্বালার মাঝে আছি। বছরের শেষ দিনে ঘর থেকে বের হতে দেয় নাই। বলে নাকি আমার বয়স হয়ে গেছে, বছরের শেষ দিনে আর ছাইপাঁশ গিলতে হবে না!
- এটা তো তাহলে বেশ করছে।
; তা হলে তুই রাগ করে আছিস ক্যান!
- এই কথাটা তুমি ফোনে জানালেই পারতে। বের হতে পারছ না। অহেতুক অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলাম।
; আরে শুন - বিবাহিত পুরুষের উপর রাগ করতে নাই। বিবাহিত পুরুষ সারাক্ষনই নানা চাপের উপর থাকে। অনেক সময় বাসা থেকে প্রয়োজনীয় ফোনটাও করতে পারে না। আমি যদি তোকে ফোন করতাম তবে তোর মামী বলত, ওকি তোমাকে ডেকেছে, তুমিই আড্ডা মারার জন্য চটফট করছ।
- যাক মামা, বাদ দাও। তোমার কোপালের মন্দ। চল চা খেয়ে আসি।

চিপাগল্লি থেকে বের হয়ে আমরা করিম টি ষ্টোরের দিকে হাটতে থাকি। মামাকে বলি, আগামী শুক্রবার আমরা কয়জন বন্ধু সকাল সন্ধ্যা ভ্রমনে বের হচ্ছি। তুমি চাইলে যেতে পার। সকালে বের হব, রাতে ফিরে আসব। পথই আমাদের পথ দেখাবে। বেইলী রোডের শ্যামল, দিলু রোডের জিতু, শান্তিনগরের টুটুল। তুমি থাকলে আরো বেশী জমবে। মামা হিসাবে ওরাও তোমাকে ফিল করে। যেতে পার। আমাদের সাথে শ্যামলের গাড়ী থাকবে। জিতু তোমাকে যেতে বলেছে।

; না, যেতে পারব বলে মনে হয় না। সাপ্তাহের এক মাত্র ছুটির দিন। বাসার অনেক কাজ। সকালে উঠে বাজার সদাই, বাচ্চাদের চুল কাটানো সেলুনে নেয়া, গোসল করিয়ে দেয়া। তারপর বিকালের দিকে তোর মামীকে তার ভাইয়ের বাসায় দিয়ে আসতে হবে এবং রাতে আবার গিয়ে নিয়ে আসতে হবে। আরো কত কি!

মামা চায়ের কাপে চুমুক দেন। আমি মামার চোহারার দিকে তাকাই। দুনিয়ার সব বিবাহিত মামারা কত অসহায়। মনের পথে যায় না যে জন!

প্রথম প্রকাশঃ চতুর্মাত্রিক(তারিখঃ ৭ জানুয়ারি ২০১১, ৫:০৭ অপরাহ্ন)

মামা কাহিনীঃ আমাদের ভাগ্য!

প্রথম প্রকাশঃ চতুর্মাত্রিক(তারিখঃ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১০, ৬:৩৪ অপরাহ্ন)

অনেকদিন ধরে আমাদের মহল্লার মামার দেখা নেই। ছেলেদের মামা ডাকলে তারা খুশি হয়। মেয়েদের আন্টি ডাকলে মাথা ফাটিয়ে দিতে চায়! রাত এগারটায় আমার অফিস থেকে ফেরার পথে চা দোকানে দাড়াই, শেষ কাপ চা খাই, যদি কারো পাই তবে কিছুক্ষন চলে আড্ডা। এইতো জীবন!

- কি রে এত রাতে কি করিস?

মামার কথা শুনে ফিরে তাকাই। চায়ের কাপে চুমুক দিতে গিয়ে পারলাম না।
; আরে মামা আমার। কেমন আছ? অনেক দিন খবর নাই। ইস কেমন জানি শুকিয়ে গেছ।
- আর বলিস না, নানাবিধ ঝামেলায় প্রান যায়। তারপর তোর মামীর সিজনাল ব্যারাম!
; কেন, মোটা মামীর আবার কি হল?
- ওই সিজনাল রোগ! কয়দিন ভাল কয়দিন কথা বন্ধ। এখন কথা বন্ধ চলছে। ঘরদোর আর ভাল লাগে না। কেন যে বিয়া করলাম।
; বিয়া করে এত বছর পার করে দিলা, এখনো মান অভিমান। বল কি?
- শুখে থাকলে ভুতে কিলায় অবস্থা। বিবাহের ১২ বছর পার হল, এখনো তোর মামীকে বুঝতে পারি নাই। থাকে ভাল থাকে ভাল তার পর একদিন ঝগড়া শুরু করে, অনেকটা আঙ্গুল মারা টাইপ ঝগড়া।
; এবার কি নিয়ে মামী লাগলো?
- এটা অবশ্য নুতন বিষয় নয়। ওই যে, আমি মরে গেলে তুমি কি আবার বিয়া করবা! আচ্ছা, তুই বল, এটা কি কোন ঝগড়ার বিষয় হতে পারে! কে আগে মরবে তা কি দুনিয়ার কেহ জানে?

মামা সিগারেট টানেন। আমাদের মহল্লার নুর নানাকে দেখে লুকানোর চেষ্টা করেন। পাকা হাজ্জী নুর নানা আমাদের কাছে চলে আসছেন। সালাম দিতেই হয়। আমি হাত বাড়াই।

- এত রাতে তোরা কি করিস? বাসা বাড়িতে যা, তোদের ওয়াইফরা যে তোদের মারে না এটাই তোদের ভাগ্য!

মামা কাহিনীঃ পুর্বাচল মুজিব সিটি।

মুসলমান বিশ্বের উত্তাল হাওয়া মনে কেমন দোলা দিয়ে যায়। তিউনিশিয়ার প্রসিডেন্ট বেন আলীর সৌদি আরবে পালায়নের পর, আর একটা পলায়ন দেখার জন্য মনটা চটফট করছিল। কিন্তু দেখা মিলছে না! মিশরের প্রসিডেন্ট হোসনী মুবারক এতটা বেহায়া হতে পারে কল্পনাও করা যায় না। আমাদের পটুয়া কাম্রুল হাসান একদা হু মো এরশাদকে ‘বিশ্ব বেহায়া’ বলেছিলেন, এখন তিনি বেঁচে থাকলে হোসনী মুবারকে কি বলতেন! মিশরের বর্তমান পরিস্থিতিকে পুরাপুরি বিশ্লেষণ করলে আতকে উঠতে হয়! এত লজ্জাহীন এবং বেহায়া প্রেসিডেন্ট পৃথিবীতে আর আসবে কি না কে জানে। কত শত হাজার প্রানের বিনিময়ে হলেও নিজের সম্পদ আর ক্ষমতা রাখা যায়! কি চেষ্টা! কিন্তু শেষ রক্ষা কি হবে!

এমনি বিক্ষিপ্ত ভাবনা চিন্তায় বাসে বসে ছিলাম। হাজীপাড়া পার হতেই নড়ে চড়ে বসি। সামনের স্টপজে নামতে হবে। আজকাল রাস্তাঘাট একটু ফাঁকা ফাঁকা মনে হয়। অফিসে আসা যাওয়ার সময় ব্যাপারটা টের পাওয়া যাচ্ছে। আগামী বিশ্বকাপ ক্রিকেটের জন্য সরকারী নির্দেশে পুরানো গাড়ীগুলো মনে হয় পালিযে গেছে। ভাল, তবে রিকশার জালাতনটা বেড়ে গেছে।

রাস্তার মাথায় নেমেই ভাবলাম বাসায় ফিরার আগে শেষ বাবের মত চা সিগারেট টেনে যাই। আমাদের করিম টি ষ্টোর। করিম ভাইয়ের দোকানের সামনে আসতেই মামার সাথে দেখা। মামাকে দেখে মন টা ভাল হয়ে গেল। কিছুক্ষন আড্ডা সাগরে গোসল সেরে পরিস্কার হয়ে যাই।

; কি খবর মামা। কেমন আছ? অনেক দিন পরে দেখা। তোমাদের পত্রিকাতো আজকাল ফাটাইয়া খবর লিখছে।
- তুই কোন খবরের কথা বলছিস।
; তোমাদের পত্রিকার আড়িয়ল বিলের খবরটা বেশ ভাল ছিল। এই খবরটা আমার মনে হয় আড়িয়ল বিল বাসীকে জাগিয়ে তুলেছিল।
- হা, টিপু সুলতানের রিপোর্ট টার কথা বলছিস? ও আসলেই ভাল লিখে।
; আচ্ছা মামা, এই টিপু সুলতান কি সেই ফেনীর সংবাদিক টিপু সুলতান! যাকে জয়নাল হাজারীর বাহিনী মেরে ফেলতে চাইছিলো?

মামা সিগারেটের মুখে আগুন দেন। আমার হাত ধরে টানেন, চল ওই দিকে চল। বেশি সময় নাই। তোর মামী আবার ফোন দিবে। আজ সকালে বের হয়ে এখনো বাসায় ফিরা হয় নাই।

- মামা, আড়িয়ল বিলে বিমান বন্দর নিয়ে কি ভাবছিলে। আমার তো মনে হয় সরকার আড়িয়ল বিলে বিমান বন্দর না করার ঘোষনা ভাল হয়েছে। আরো ভাল হত যদি পুরা বিমানবন্দর করার পরিকল্পনা থেকে বের হয়ে আসত।
; আসলে সরকার একটা হালকা পাতলা তওবা করে ফেলতে পারে। এ ধরনের নূতন কিছু মানুষ আর চায় না তা সরকারকে বুঝতে হবে।
- তা হলে সরকার এখন কি করবে? নূতন নূতন পরিকল্পনা না নিলে চলবে কি করে।
; কেন? দেশে কি সমস্যার অভাব আছে?
- আসলে মানুষ এখন পুরানো বিষয় গুলোর সমাধান চায়। তাদের দেয়া পুরানো প্রতিশ্রতি গুলোর সমাধান চায় মানুষ।
; তাহলে নামকরনের কি হবে?
- বিমানবন্দর না হলে নাই। সরকারের যে মুজিব সিটি বানানোর ইচ্ছা আছে তা সহজেই বানাতে পারে।
; কি করে? জায়গা পাবে কই?
- সরকার ইচ্ছা করলেই ঢাকার পূর্বাচলের নাম মুজিব সিটি করে নিতে পারে। আজ এত বছরেও পূর্বাচল সিটির উন্নতি হচ্ছে না। হাজার হাজার গ্রাহক রাজউক থেকে প্লট নিয়েও বুঝে পাচ্ছে না। যারা প্লট নিয়েছে তারা তাদের এ জন্মে প্লট ভোগ করে যেতে পারবে বলে মনে হয় না।
; কি করে বুঝলে।
- পূর্বাচলে যারা প্লট পেয়েছে তাদের কারোই বয়সই এখন আর পঞ্চাশের কম নয়! সংবাদিক, ডাক্তার, সরকারী চাকুরীজীবী, ব্যবসাহী, বিচারপতি, আকাশী, বাতাসী ও প্রবাসী! কার কথা বলব। এরা এখনো ইন্সটলমেন্ট দিয়ে যাচ্ছে। কবে প্লট পাবে তাও কেহ বলতে পারছে না তবে একটা হিসাব করা যায়।
; কি!
- প্লট বুঝে পেতে যদি আরো দশ বছর লাগে, শহর গড়ে উঠতে লাগবে আরো দশ বছর। মানে পূর্বাচলে বাস করতে হলে জমির মালিকদের তখন বয়স হবে সত্তর বছর। সেই বয়সে দুনিয়ার জায়গা দিয়ে আর কি হবে? তা ছাড়া বেশীর ভাগ পূর্বাচল প্লটের মালিক তখন থাকবে মাটির নীচের দুনিয়ায়!

আমি কিছুটা আতকে উঠি। হা, তাই তো? দুনিয়াতে একটা লোক জায়গা কিনে কি জন্য! নিজের টাকায় কেনা জায়গা যদি নিজে ভোগ করতে না পারে তবে? মামার চিন্তাটা মাথায় ধরে। আসলেই সত্য ঘটনা। মামা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।

- সংবাদিক কোটায় আমারো পূর্বাচলে একটা প্লট আছে। এটাই তোর মামীর ফিক্স ডিপোজিট। আমার মৃত্যুর পর তোর মামী যদি এটা পায় তবে সন্তানদের নিয়ে বাচতে পারবে। নতুবা ঢাকা থেকে বিদায় নিয়ে হবে।

মামার কথায় আমার হাসি এসে যায়। তুমি দুনিয়াতে থাকবে না, তোমার রক্তে মাংশে পানি করা টাকায় গড়ে যাচ্ছ সন্তানদের ভবিষ্যত।

মামা এর পর বলেন, আমাদের সরকারের অবস্থা হচ্ছে সেই লালন গানের মত - বাড়ির কাছে আরশী নগর, সেথায় পড়শী বসত করে, আমি একদিন ও না দেখিলাম তারে। সরকার পূর্বাচলের নাম পাল্টে ইচ্ছা মত যে কোন কিছু রাখতে পারে। দ্রুত শহরে পরিনত করে তাদের নাম প্রতিষ্ঠিত করতে পারে, অনেক লোকের মুখে হাসি ফুটাতে পারে - পূর্বাচল মুজিব সিটি।