সোমবার, ২৮ মার্চ, ২০১১

মামা কাহিনীঃ কঠিন ভালবাসা নাকি অন্য কিছু!

চিপাগল্লি দিয়ে বের হতেই মহল্লা'র বড় রাস্তা। আমাদের মহল্লার মাসুম মামাকে দেখি করিম ভাইয়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছেন। আমি এগিয়ে যাই। অনেক দিন পর মামার সাথে দেখা। উনি অবশ্য আমার আপন মামা না। মহল্লার সবাই ওনাকে মামা ডাকেন আমিও ডাকি। তবে আমার সাথে ওনার মতের মিল একটু বেশী। আমরা নানা মতে প্রায় এক মত থাকি। মহল্লার নানা বিষয়ে মামার পাশে পাশে আমি থাকি। এই আর কি।

; মামা, কি অবস্থা! মাথার চুলতো পালিয়ে যাচ্ছে।
- আর বলিস না, তোর মামীর বদ দোয়া লাগছে। তোর মামী আমাকে আর চুলওযালা দেখতে চায় না!
; বলেন কি মামা। কেন?
- বলতো দেখি, আমি হ্যান্ডসাম থাকলে তো মামীর কি? তোর মামী আমাকে আর সুদর্শন দেখতে চায় না। তার জন্য নাকি প্রথমে চুল চলে যাওয়া দরকার। টাকা মাথার ছেলেদের দিকে নাকি কোন মেয়ে ফিরেও চায় না! তোর মামী চায়, আমার দিকে যেন কোন মেয়ে চোখ না দেয়।

আমি কিছুটা অবাক হলেও মামাকে গিয়ারাপ করি। আসলেই মাসুম মামার চুল গত ছয় মাসে অনেক চলে গেছে।
; তো মামা তুমি নিজেও কি চুল না পড়ার জন্য কোন ব্যবস্থা নিচ্ছ না! বাজারে কত কি পাওয়া যায়। কত কবিরাজ আছে।
- না রে, ভাবছি চুল পড়া বন্দের জন্য আমি আর কোন ব্যবস্থা নিব না।
; তা হলে তো তোমার দিন ফুরাবে! মহল্লায় মামা থেকে নানা হয়ে যাবে।
- আমি নানা হয়ে গেলেও কোন আপত্তি নাই। তবে তোর মামীকেও দেখে নিব।
; সে আবার কি!
- আমিও তোর মামীর জন্য একটা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি! তোর মামীকে মোটা মহিলা বানাবো। আমার দিকে কেহ না তাকালে তার দিকেও কেহ তাকাবে না। তোরা ডাকবি 'মোটা মামী'!

আমি হাসতে থাকি।
; মামা, মামী যেমন তোমাকে ভালবাসে তুমিও তেমনি মামীকে ভালবাস! তোমাদের এ ভালবাসা কঠিন ভালবাসা নাকি অন্য কিছু!

প্রথম প্রকাশঃ চতুরমার্ত্রিক তারিখঃ ১১ আগষ্ট ২০১০, ১২:২৫ পূর্বাহ্ন

মামা কাহিনীঃ উত্তর জানা আছে কি!

অফিসে যাব বলে বাসা থেকে বের হয়েছি। মহল্লার গলির মুখ দিয়ে বের হতেই মাসুম মামার সাথে দেখা। করিম টি স্টলে চা খাচ্ছেন, হাতে সিগারেট। চান রাতে দেখা হয়েছিল এর পর আর দেখা নাই। ঈদ গত ছয় দিন আজ। ঢাকা শহরটা এখনো জমে উঠে নাই। শহরের যান চলাচল স্বাভাবিক, যানযট নাই। ফুটপাতে কোন ভিক্ষুক কিংবা হকার নেই। কি সুন্দর! ঈদ মুবারক বলে মামার দিকে হাত বাড়াই। কোলাকুলি করে নিতে চাই। মামা বললেন -

; কিরে, গ্রামের বাড়িতে ঈদ করে কবে এলি?
- মামা, ঈদ ঢাকাতেই করেছি। ঈদের পর দিন বাড়ীতে গিয়ে গাছপালা দেখে এলাম। গ্রামে এখন সবুজের সমারোহ। যে দিকে চোখ দিবেন শুধু সবুজ আর সবুজ। মনে ভীষন শান্তি পাবেন। মামা, আপনাকে তো আমি অনেক আগেই বলে আসছি আমাদের বাড়িতে বেড়াতে যেতে। বড় রাস্তা থেকে নেমেই আমাদের গ্রাম! ছবির মতন।
; তোদের বাড়ীতে আমার যাওয়ার ইচ্ছা আছে। সবুজ আমারো ভাল লাগে। কিন্তু তোর মামীর পারমিশন কে নেবে?
- বিবাহের এত বছর পার করে এলেন, এখনো মামী ছাড়া কিছু বুঝলেন না।
; ঠিক তা না রে! কোথায় যেন আটকা পড়ে আছি।

মাসুম মামার মামীর প্রতি ভালবাসা আমার জানা আছে। সহজ সরল আমাদের মহল্লার এ মামা মামীকে ভীষন ভাল বাসেন। দুজনে রিক্সায় উঠে পড়ি। মামাও অফিসে যাবেন। মামাকে কাওরানবাজারে নামিয়ে আমি অফিসে চলে যাব। রিক্সার জন্য এখন সকল পথ খোলা দেখছি। ঢাকার সব রাস্তাই চলাচল করতে পারে। কিন্তু আর কত দিন? মনে হয় আগামী শনিবার থেকে আবার শুরু হবে আমাদের শহুরে জীবন! মামা সিগারেট টানছেন পায়ের উপর পা দিয়ে। অর্ধেক শেষ করে আমাকে দিবেন।

মামার সাথে আমার নানাবিধ মিল আছে। আমাদের একটা ভাল মিল, মামার অফিস শুরু হয় বেলা ১২টা থেকে আর আমারো তাই। আমি যেমন রাত জাগি মামাও তেমনি রাত জাগেন। কত গভীর রাতে মামার সাথে ইয়াহু চ্যাটে চ্যাট করেছি।
- মামা, ঢাকা শহরটা এখন তুমি কেমন উপভোগ করছ।
; এমনই তো শান্ত ঢাকা শহর থাকার কথা ছিল। জনসংখ্যার চাপে শহরটা একদম শেষ হয়ে গেল রে। ছোট একটা শহরের মালিক কোটি কোটি লোক! আফসোস আমরা এ শহরটার জন্য কিছুই করতে পারলাম না। জানিস আমাদের একটা পরিসংখ্যানও নেই, কত লোক এ শহরে আছে!
- আচ্ছা মামা, আপনি তো সংবাদিক। আমাকে কি বলতে পারেন আমাদের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ডে টু ডে নানা মন্ত্রনালয় থেকে কি কি রির্পোট পেয়ে থাকেন। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর কি একবারো জানতে ইচ্ছা হয় না, তার দেশে কত ডাক্তার, কত ঈঞ্জিনিয়ার, কত উকিল, কত কবিরাজ আছে? কত লোক আজ সকালে জন্মেছে, কত লোক আজ মরেছে?

মামা আমার খামোশ খেয়ে আছেন। আমার দিকে তাকান। মামা মনে হয় রেগে গেছেন। আমাদের রিক্সা কাওরানবাজারে মামার অফিসের কাছা কাছি চলে এসেছে। মামা নেমে পকেটে হাত দেন, আমি রিক্সাচালকে চালাতে বলি।

- মামা, রাতে ইয়াহুতে আসবেন।

প্রথম প্রকাশঃ চতুরমার্ত্রিক তারিখঃ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১০, ৪:২৪ অপরাহ্ন

মামা কাহিনীঃ মামী নাম্বার ওয়ান।

অনেকদিন মামার সাথে দেখা নাই। সারা বিশ্বে কত ঘটনা কত কিছু ঘটে গেল। মধ্যপ্রাচ্যের সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন গুলো কঠিন ভাবে মার খেয়ে যাচ্ছে। বাহারাইনে সৌদিরা সৈন্য পাঠিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় মানুষের মাথার খুলি উড়িয়ে দিচ্ছে। লিবিয়ায় গাদ্দাফীকে মনে হচ্ছে হাটানো যাবে না, তিনি তার ভার্জিন নারী গার্ড নিয়ে এবার টিকে যেতে পারেন বলে মনে হচ্ছে। মামাকে পেলে একটু আলাপ করা যেত।

জাপানের সুনামীর ঘটনা দেখে মনে হয় কোয়ামত দিনের নমুনার একটা শস্যদানা দুনিয়াতে ঘটে গেল। রোজ কোয়ামতের দিনে কি কি হবে তার কিছু কিছু বর্ননা অনেক মমিন মুসলমান লোকেই জানে। যে সব ঘটনার বর্ননার কথা কিতাব সমুহে দেখা যায়, ঠিক তেমনি ঘটনার চোখে দেখার সাক্ষী হয়ে গেলাম, ভিডিও এবং ছবির মাধ্যমে। জাপানের সুনামী আর বাংলাদেশের আইলা তথা সুনামী আমার কাছে একই ঘটনা বলে মনে হয়। বাংলাদেশ গরীব দেশ, সরকারের নিচু মানসিকতার জন্য আইলা এতটা প্রচার পায় নাই। তবে আইলা নিয়ে পত্র পত্রিকায় কিছু খবর এখনো দেখা যায়। আইলা ঘটেছিল রাতের আধারে, সেজন্য আইলার কোন ছবি কিংবা ভিডিও আমাদের সামনে আসে নাই। সংবাদিক মামাকে পেলে একটু জ্ঞান বাড়িয়ে নেয়া যেত।

করিম টি ষ্টোরের সামনে এসে মামাকে ফোন দেই। কয়েকবার রিং বাজে, মামা ফোন ধরেন না। তদুপরি মনে হচ্ছে মামা ফোন কেটে দিয়েছেন। মনের অবস্থা যা ছিল তার থেকেও বেশী খারাপ হয়ে গেল। কাউকে ফোন দিলে এবং রিসিভ না করে কেটে দিলে মনে ভীষন কষ্ট লাগে। আর তা যদি বন্ধু স্থানীয় কেহ হয় তবে তো কষ্টের পরিমান আরো বেড়ে যায়! এটা এক ধরনের অবহেলা!

তবে নামাজের সময় কিংবা অফিসে বসের সামনে দাঁড়িয়ে কিংবা মিটিংএ থাকার সময় কেহ ফোন দিলে তা কেটে দেয়া যেতে পারে! বসের সামনে কিংবা মিটিংএ মোবাইলের রিঙ্গার অফ কিংবা বন্ধ করে যাওয়া উচিত। বসের সামনে মোবাইল বেজে উঠা এক ধরনের চরম বেয়াদপি। ভাল বস হলে বলবে, আমার কাছে আসার সময় মোবাইল বন্ধ করে আসবে। আর যদি একটু ঘাড়ের রগ তোড়া বস হয় তবে মুখের সামনেই বলে ফেলবে, এত দিনেও আপনার কমনসেন্স হল না!

চায়ের কাপ ঠোঁটের কাছে নিয়ে নানা চিন্তার মাঝে আমার সময় পার হচ্ছিলো। এমন সময় এলজি কেএস৬৬০ বেজে উঠে। আরো এ দেখছি মামা, রিং ব্যাক করেছেন।

; হ্যালো মামা, স্লামালাইকুম।
- কিরে কি খবর, কই আছস?
; মামা, ফোন দিছিলাম ধর নাই ক্যান।
- আরো তোর মামী সাথে ছিল। অফিস থেকে বের হয়ে তোর মামীকে নিয়ে মার্কেটে যেতে হয়েছিল। তোর মামীকে বাসায় নামিয়ে এখন বাসার সামনে আছি।
; তোমার যা অবস্থা মামা। সারা জীবন মামীকে ভয় পেয়ে কাটিয়ে দিলে। করিম ভাইয়ের চা দোকানের সামনে আছি, চলে আস। একসাথে চা, সিগারেট টানি।
- দাঁড়া, আমি আসছি।

মামার সাথে কথা বলে ফোন পকেটে রেখে সিগারেটের শেষাঙ্গে টান দিয়ে ফেলে দেই। মামা আসলে মামার টাকায় আবার চা খাবো এবং আর একটা ধরাবো! রাত এখন পৌনে দশটা, রাস্তায় এখনো মানুষের ভিড়। সরকার এখনো মানুষ নিয়ন্ত্রন না করতে পারলে বাংলাদেশে সুনামী লাগবে না, এমনিতেই সুনামী হয়ে যাবে!

বর্তমানে আদম শুমারী চলছে, এবার দেখা যাবে বাংলাদেশে কতজন মানুষ আছে! অনেকে বলেন ১৭ কোটির কাছাকাছি কিন্তু সংখ্যাটা শুনলে প্রধানমন্ত্রী সহ সরকারের নানা পর্যায়ে থাকা ভদ্রলোকেরা কেন জানি রাগ করে ফেলে। সরকারের নানা স্তরে বড় পোষ্টে থাকা লোকজন কেন জানি এসত্য মনে নিতে পারে না! সরকারের নানা পর্যায়ে কেন এই সংখ্যা লুকাতে চায়, এটা নিয়েও একটা গবেষণা হতে পারে এবং পিএইচডিতে থিসিস জমা দেয়া যেতে পারে!

এবার আশাকরি সঠিক সংখ্যা জানা যাবে। জনসংখ্যা নিয়ে আমাদের যে একটা ভুল বুঝা বুঝি আছে তার একটা বিহিত ব্যবস্থা হবে। সঠিক সংখ্যা জেনে সরকার বাহাদুরো তার কি করনীয় হতে পারে সে দিকে প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারবে। তবে কোন জানি মনে হয়, সরকারের পরিসংখ্যান মন্ত্রণালয় হিসাবে একটা ঘপলা করেই ফেলবে। পরিবার মন্ত্রনালয়ের যোগসাজসে কয়েক কোটি জনসংখ্যা লুকিয়ে রিপোর্ট দিবে! এতে সরকার বাহাদুরের ভাষনে বলতে ভাল শুনাবে যে, আমাদের স্বাসনামলে দেশে জনসংখ্যা তেমন বাড়ে নাই! জনসংখ্যা যা বাড়ার তা বেড়েছে, গত চার দলীয় স্বাসনামলে।

মোবাইলের রিং বেজে উঠায় চিন্তায় ছেদ পড়ে। আরো এ যে মামার নাম্বার!

; জ্বী মামা। এত দেরী করছ ক্যান।
- আমি আসতে পারব না। পরে দেখা হবে।
; কেন, কি হল।
- তোর মামীকে নিয়ে মার্কেটে গিয়েছিলাম, তিনি তার কাপড় সহ একটা ব্যাগ নাকি কোন দোকানে ফেলে এসেছেন। তা আনতে তোর মামীকে নিয়ে আবার মার্কেটে যেতে হবে।
; কিন্তু...

আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মামা ফোন কেটে দিলেন। কিন্তু এখন যে রাত সোয়া দশটা, চৌদ্দ দলীয় স্বাসনামলে রাত আট'টার পর সকল দোকান পাট বন্ধ রাখার যে নিদের্শ আছে তা মামাকে মনে করিয়ে দিলে ভাল হত!

প্রথম প্রকাশঃ চতুরমার্ত্রিক, তারিখঃ ১৮ মার্চ ২০১১, ২:০৫ অপরাহ্ন