সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

মামা কাহিনীঃ মনের পথে যায় না যে জন!

৩১শে ডিসেম্বর রাতে মামার সাথে দেখা করা আমার পুরানো একটা রেওয়াজ। যত রাতই হউক না কেন। বছরের শেষ দেখা, শেষ আড্ডা মারি। দুইজনে মিলে করিম টি ষ্টোরে চা খাই, সিগারেট টানি। এবার মামাকে মোবাইলে বললাম, মামা আমি অফিস শেষে রাত এগারটায় থাকব, তুমি এসে যাবে। মামা হা বলেও এলেন না। অনেকক্ষন অপেক্ষা করে আমি একাই চা সিগারেট টেনে বাসায় ফিরি। মনটা মামার প্রতি ভীষন বিল্লা হয়ে আছে। নিয়ম ভংগ করা মামার ঠিক হয় নাই। নিয়ম মানাই মানষের কাজ।

গতরাতে আমাদের চিপা গলির মাথায় মামার সাথে দেখা। না দেখার ভান করে পাশকেটে আমি বাসার দিকে পা বাড়াই। নিয়ম ভাংগা মামার সাথে আমিও নিয়ম ভাংতে চাই। এত দিনের একটা নিয়ম কি করে মামা ভাংতে পারে।

; কি রে কই যাস। তোর জন্য দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি আর তুই না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছিস।

মামার কথার মনের সমস্ত দুঃখ হাওয়া হয়ে উড়ে যায়। যেন এই মাত্র দেখেছি এমন ভাব করে মামাকে সালাম দেই। আরে মামা, কেমন আছ? তোমার উপর রেগে আছি তাই চলে যাচ্ছিলাম। বছরের শেষ দিন দেখা করবে বলেও দেখা করলে না।

; তোর মামীর জ্বালায় বের হতে পারি নাই।
- মানে।
; তোর মামীর সাথে সংসারের সময় যত বাড়ছে, মনে হয় তোর মামী ততই বেশী বেশী দারোয়ানীর কাজ করছে। বর্তমান সময়ে এ এক নুতন মহা জ্বালার মাঝে আছি। বছরের শেষ দিনে ঘর থেকে বের হতে দেয় নাই। বলে নাকি আমার বয়স হয়ে গেছে, বছরের শেষ দিনে আর ছাইপাঁশ গিলতে হবে না!
- এটা তো তাহলে বেশ করছে।
; তা হলে তুই রাগ করে আছিস ক্যান!
- এই কথাটা তুমি ফোনে জানালেই পারতে। বের হতে পারছ না। অহেতুক অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলাম।
; আরে শুন - বিবাহিত পুরুষের উপর রাগ করতে নাই। বিবাহিত পুরুষ সারাক্ষনই নানা চাপের উপর থাকে। অনেক সময় বাসা থেকে প্রয়োজনীয় ফোনটাও করতে পারে না। আমি যদি তোকে ফোন করতাম তবে তোর মামী বলত, ওকি তোমাকে ডেকেছে, তুমিই আড্ডা মারার জন্য চটফট করছ।
- যাক মামা, বাদ দাও। তোমার কোপালের মন্দ। চল চা খেয়ে আসি।

চিপাগল্লি থেকে বের হয়ে আমরা করিম টি ষ্টোরের দিকে হাটতে থাকি। মামাকে বলি, আগামী শুক্রবার আমরা কয়জন বন্ধু সকাল সন্ধ্যা ভ্রমনে বের হচ্ছি। তুমি চাইলে যেতে পার। সকালে বের হব, রাতে ফিরে আসব। পথই আমাদের পথ দেখাবে। বেইলী রোডের শ্যামল, দিলু রোডের জিতু, শান্তিনগরের টুটুল। তুমি থাকলে আরো বেশী জমবে। মামা হিসাবে ওরাও তোমাকে ফিল করে। যেতে পার। আমাদের সাথে শ্যামলের গাড়ী থাকবে। জিতু তোমাকে যেতে বলেছে।

; না, যেতে পারব বলে মনে হয় না। সাপ্তাহের এক মাত্র ছুটির দিন। বাসার অনেক কাজ। সকালে উঠে বাজার সদাই, বাচ্চাদের চুল কাটানো সেলুনে নেয়া, গোসল করিয়ে দেয়া। তারপর বিকালের দিকে তোর মামীকে তার ভাইয়ের বাসায় দিয়ে আসতে হবে এবং রাতে আবার গিয়ে নিয়ে আসতে হবে। আরো কত কি!

মামা চায়ের কাপে চুমুক দেন। আমি মামার চোহারার দিকে তাকাই। দুনিয়ার সব বিবাহিত মামারা কত অসহায়। মনের পথে যায় না যে জন!

প্রথম প্রকাশঃ চতুর্মাত্রিক(তারিখঃ ৭ জানুয়ারি ২০১১, ৫:০৭ অপরাহ্ন)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন