সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

মামা কাহিনীঃ পুর্বাচল মুজিব সিটি।

মুসলমান বিশ্বের উত্তাল হাওয়া মনে কেমন দোলা দিয়ে যায়। তিউনিশিয়ার প্রসিডেন্ট বেন আলীর সৌদি আরবে পালায়নের পর, আর একটা পলায়ন দেখার জন্য মনটা চটফট করছিল। কিন্তু দেখা মিলছে না! মিশরের প্রসিডেন্ট হোসনী মুবারক এতটা বেহায়া হতে পারে কল্পনাও করা যায় না। আমাদের পটুয়া কাম্রুল হাসান একদা হু মো এরশাদকে ‘বিশ্ব বেহায়া’ বলেছিলেন, এখন তিনি বেঁচে থাকলে হোসনী মুবারকে কি বলতেন! মিশরের বর্তমান পরিস্থিতিকে পুরাপুরি বিশ্লেষণ করলে আতকে উঠতে হয়! এত লজ্জাহীন এবং বেহায়া প্রেসিডেন্ট পৃথিবীতে আর আসবে কি না কে জানে। কত শত হাজার প্রানের বিনিময়ে হলেও নিজের সম্পদ আর ক্ষমতা রাখা যায়! কি চেষ্টা! কিন্তু শেষ রক্ষা কি হবে!

এমনি বিক্ষিপ্ত ভাবনা চিন্তায় বাসে বসে ছিলাম। হাজীপাড়া পার হতেই নড়ে চড়ে বসি। সামনের স্টপজে নামতে হবে। আজকাল রাস্তাঘাট একটু ফাঁকা ফাঁকা মনে হয়। অফিসে আসা যাওয়ার সময় ব্যাপারটা টের পাওয়া যাচ্ছে। আগামী বিশ্বকাপ ক্রিকেটের জন্য সরকারী নির্দেশে পুরানো গাড়ীগুলো মনে হয় পালিযে গেছে। ভাল, তবে রিকশার জালাতনটা বেড়ে গেছে।

রাস্তার মাথায় নেমেই ভাবলাম বাসায় ফিরার আগে শেষ বাবের মত চা সিগারেট টেনে যাই। আমাদের করিম টি ষ্টোর। করিম ভাইয়ের দোকানের সামনে আসতেই মামার সাথে দেখা। মামাকে দেখে মন টা ভাল হয়ে গেল। কিছুক্ষন আড্ডা সাগরে গোসল সেরে পরিস্কার হয়ে যাই।

; কি খবর মামা। কেমন আছ? অনেক দিন পরে দেখা। তোমাদের পত্রিকাতো আজকাল ফাটাইয়া খবর লিখছে।
- তুই কোন খবরের কথা বলছিস।
; তোমাদের পত্রিকার আড়িয়ল বিলের খবরটা বেশ ভাল ছিল। এই খবরটা আমার মনে হয় আড়িয়ল বিল বাসীকে জাগিয়ে তুলেছিল।
- হা, টিপু সুলতানের রিপোর্ট টার কথা বলছিস? ও আসলেই ভাল লিখে।
; আচ্ছা মামা, এই টিপু সুলতান কি সেই ফেনীর সংবাদিক টিপু সুলতান! যাকে জয়নাল হাজারীর বাহিনী মেরে ফেলতে চাইছিলো?

মামা সিগারেটের মুখে আগুন দেন। আমার হাত ধরে টানেন, চল ওই দিকে চল। বেশি সময় নাই। তোর মামী আবার ফোন দিবে। আজ সকালে বের হয়ে এখনো বাসায় ফিরা হয় নাই।

- মামা, আড়িয়ল বিলে বিমান বন্দর নিয়ে কি ভাবছিলে। আমার তো মনে হয় সরকার আড়িয়ল বিলে বিমান বন্দর না করার ঘোষনা ভাল হয়েছে। আরো ভাল হত যদি পুরা বিমানবন্দর করার পরিকল্পনা থেকে বের হয়ে আসত।
; আসলে সরকার একটা হালকা পাতলা তওবা করে ফেলতে পারে। এ ধরনের নূতন কিছু মানুষ আর চায় না তা সরকারকে বুঝতে হবে।
- তা হলে সরকার এখন কি করবে? নূতন নূতন পরিকল্পনা না নিলে চলবে কি করে।
; কেন? দেশে কি সমস্যার অভাব আছে?
- আসলে মানুষ এখন পুরানো বিষয় গুলোর সমাধান চায়। তাদের দেয়া পুরানো প্রতিশ্রতি গুলোর সমাধান চায় মানুষ।
; তাহলে নামকরনের কি হবে?
- বিমানবন্দর না হলে নাই। সরকারের যে মুজিব সিটি বানানোর ইচ্ছা আছে তা সহজেই বানাতে পারে।
; কি করে? জায়গা পাবে কই?
- সরকার ইচ্ছা করলেই ঢাকার পূর্বাচলের নাম মুজিব সিটি করে নিতে পারে। আজ এত বছরেও পূর্বাচল সিটির উন্নতি হচ্ছে না। হাজার হাজার গ্রাহক রাজউক থেকে প্লট নিয়েও বুঝে পাচ্ছে না। যারা প্লট নিয়েছে তারা তাদের এ জন্মে প্লট ভোগ করে যেতে পারবে বলে মনে হয় না।
; কি করে বুঝলে।
- পূর্বাচলে যারা প্লট পেয়েছে তাদের কারোই বয়সই এখন আর পঞ্চাশের কম নয়! সংবাদিক, ডাক্তার, সরকারী চাকুরীজীবী, ব্যবসাহী, বিচারপতি, আকাশী, বাতাসী ও প্রবাসী! কার কথা বলব। এরা এখনো ইন্সটলমেন্ট দিয়ে যাচ্ছে। কবে প্লট পাবে তাও কেহ বলতে পারছে না তবে একটা হিসাব করা যায়।
; কি!
- প্লট বুঝে পেতে যদি আরো দশ বছর লাগে, শহর গড়ে উঠতে লাগবে আরো দশ বছর। মানে পূর্বাচলে বাস করতে হলে জমির মালিকদের তখন বয়স হবে সত্তর বছর। সেই বয়সে দুনিয়ার জায়গা দিয়ে আর কি হবে? তা ছাড়া বেশীর ভাগ পূর্বাচল প্লটের মালিক তখন থাকবে মাটির নীচের দুনিয়ায়!

আমি কিছুটা আতকে উঠি। হা, তাই তো? দুনিয়াতে একটা লোক জায়গা কিনে কি জন্য! নিজের টাকায় কেনা জায়গা যদি নিজে ভোগ করতে না পারে তবে? মামার চিন্তাটা মাথায় ধরে। আসলেই সত্য ঘটনা। মামা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।

- সংবাদিক কোটায় আমারো পূর্বাচলে একটা প্লট আছে। এটাই তোর মামীর ফিক্স ডিপোজিট। আমার মৃত্যুর পর তোর মামী যদি এটা পায় তবে সন্তানদের নিয়ে বাচতে পারবে। নতুবা ঢাকা থেকে বিদায় নিয়ে হবে।

মামার কথায় আমার হাসি এসে যায়। তুমি দুনিয়াতে থাকবে না, তোমার রক্তে মাংশে পানি করা টাকায় গড়ে যাচ্ছ সন্তানদের ভবিষ্যত।

মামা এর পর বলেন, আমাদের সরকারের অবস্থা হচ্ছে সেই লালন গানের মত - বাড়ির কাছে আরশী নগর, সেথায় পড়শী বসত করে, আমি একদিন ও না দেখিলাম তারে। সরকার পূর্বাচলের নাম পাল্টে ইচ্ছা মত যে কোন কিছু রাখতে পারে। দ্রুত শহরে পরিনত করে তাদের নাম প্রতিষ্ঠিত করতে পারে, অনেক লোকের মুখে হাসি ফুটাতে পারে - পূর্বাচল মুজিব সিটি।

1 টি মন্তব্য:

  1. প্রথম প্রকাশঃ চতুর্মাত্রিক(তারিখঃ ৬ ফেব্রুয়ারী ২০১১, ৩:২৯ অপরাহ্ন)

    উত্তরমুছুন