বুধবার, ২০ এপ্রিল, ২০১১

মামা কাহিনীঃ ইশারা ভাষা।

আবারো অনেক দিন আমার মহল্লার মামার সাথে দেখা নাই। আজকাল আমাদের আড্ডায় আর কারোই মন বসছে না। নানাবিধ ঝামেলায় জীবন একদম শেষ। মরলেই বাঁচি অবস্থা। করিম টি ষ্টোরের সামনে নেমে মামাকে ফোন করি।

; হ্যালো মামা, কি খবর। কেমন আছ? খবর কি।
- তুই কোন খবরের কথা বলছিস।
; নাহ অনেকদিন তোমার সাথে দেখা নেই। তুমি কেমন আছ জানতে চাইলাম আর কি। এবারে নববর্ষেও দেখা হল না, একটা ফোনও দিলে না। দিন দিন কেমন স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছ।
- তুই কোথায় আছিস এখন।
; মামা, আমি চা দোকানের সামনে আছি।
- তুই দাঁড়া আমি কিছুক্ষনের মধ্য চলে আসছি। একসাথে সিগারেট টানব।

এই হচ্ছে মোবাইলের সুবিধা। মোবাইল না থাকার আগে আড্ডায় এক এক জনকে বাসায় বাসায় গিয়ে ডেকে আনতে হত। আমাদের ছেলে মেয়েরা হয়ত একদিন বিশ্বাসই করবে না যে, বাসার সামনে গিয়ে আমরা বিশেষ শিষ দিলে, বন্ধুরা নেমে আসত। মোবাইলের যুগে ওই শিষের দরকার হচ্ছে না - ম্যাসেজ, মিস কল কিংবা ডাইরেক্ট কল! তবে মোবাইলের কারনে মিথ্যা অবস্থান জানানোর প্রবনতা আমাদের সমাজে চরম বেড়ে গেছে।

আবুল হোটেলের সামনে বাসে বসে অফিসে ফোনে বলছে, স্যার আমি কাকরাইলে আছি। বিএনপি’র মিছিলের কারনে রাস্তা ঘাট বন্ধ। বিরাট জ্যাম পড়েছে, বসে আছি। যাত্রীরা উঁকিজুকি দিয়ে বিএনপির মিছিল খুঁজেন। কিছু না দেখে, একে অপরের দিকে তাকিয়ে দেখেন। কেহ কিছু বলেন না। বলে আর কি হবে, এই সমাজের কলিজাতে পোকায় বাসা বেঁধেছে! যে দেশে মন্ত্রী, এমপিগন মিথ্যা বলেন, সেই দেশের সাধারন কেমন হবে? সাধারন মানুষের স্বার্থের দিকে যে সরকার তাকায় না, তাদের দেশে আর কি ভাবনার আছে? যেখানে একজন মন্ত্রী বলেন, ওদের বিচার করা যাবে না কারন তারা শক্তিশালী। এখানে চোরেরাই শক্তিশালী! বটে।

- কি রে, কি ভাবছিস? গায়ের উপর দিয়েতো রিক্সা চলে যাবে।

মামার কথায় এই বাস্তব দুনিয়াতে ফিরে আসি। মামার সাথে হ্যান্ডশেক করি। খরখরে হাতের তালু, আঙ্গুল গুলো ক্যামিক্যাল মিশানো কলা শুকিয়ে গেলে যেমনটা লাগে!

; মামা, মোবাইলের কথা ভাবছিলাম। কি এক যন্ত্র বানাইলো! দেখো, তোমার বাসায় না যেয়ে তোমাকে ডেকে নিয়ে এলাম। তোমার বাসার কেহ টের পেল না।
- হা, আবিস্কারের বিশাল কেরামতি। আগামী পঞ্চাশ বছর পর কি আসবে কে জানে।
; মামা, মোবাইল ছাড়া দিনগুলোর কথা মনে আছে। বাসার নীচে যেয়ে তিন তালি! তালিতে কাজ না হলে বিশেষ শিষ।
- মনে থাকবে না কেন। এই আর কয় দিন আগের কথা! সম্রাট হুমায়ুনের আমলের সব ঘটনাতো নয়!
; মোবাইল থাকলে তোমাকে জুলেখাকে হারাতে হত না! জুলেখার পিতা জুলেখাকে আটকে রাখতে পারত না। এসএমএস দিয়ে জুলেখাকে প্রতিদিন অবস্থান জানিয়ে দিতে পারতে!

মামা সিগারেট ধরান। আমারো কি হল, জুলেখার নামটা নিয়ে নিলাম! আসলে মামাকে ক্ষেপাতে আমি মাঝে মাঝেই জুলেখার নাম নেই। জুলেখার নাম শুনলেই মামা একটু নরম দিলের মানুষে পরিনত হয়ে যান। আমাদের অনেকের জন্য চা সিগারেট ফ্রী হয়ে যায়।

; তোর কি আমার ইশারা ভাষার কথা মনে আছে? আমাদের বাড়ীর পিছনের মাঠ শেষে জুলেখাদের চার তলা বাড়ী ছিল। জুলেখারা থাকত চার তলার পূর্ব পাশের ফ্লাটে। আমাদের প্রেমের সব জানাজানি হয়ে যাবার পর, জুলেখাকে যখন আর বের হতে দিত না কিংবা বের হলে সঙ্গে কেঊ না কেউ থাকত। তখন আমি আর জুলেখা ইশারা ভাষা শিখে নিয়েছিলাম। দুটো ইশারা ভাষার বই কিনেও ছিলাম।

- এখন আবশ্য বিটিভিতে মাঝে মাঝে ইশারা ভাষা দেখি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী কোথায়ও ভাষন দিলে পাশে একজন দাঁড়িয়ে ইশারা ভাষায় ইশারা দিতে থাকেন। মনে হয় কঠিন ভাষা। শুধু হাত মুখ আর চোখের অভিপ্রায়ে কাউকে কিছু নিখুত করে বুঝিয়ে দেয়া অনেক কষ্টের।

; জুলেখা আর আমি তো ইশারা ভাষা দিয়েই প্রায় দুই বছর প্রেম চালিয়ে গিয়েছিলাম। ইস তখন মোবাইল ছিল না। তা হলে জুলেখা আর আমিই সংসারি হতাম হয়ত। তোর মোটা মামী এসে জীবনটা ফাতা ফাতা বানাতে পারত না।

মামা বলেন, আজ চলি রে। বাসা থেকে বার বার কল আসছে। ঘড়িতে তখন রাত সাড়ে এগারটা। আমার কোপালেও আজ শনি লিখা হয়ে গেছে! ইশারা ভাষাই ভাল ছিল! দেখা না গেলে বুঝানো যেত না!

প্রথম প্রকাশ। চতুর্মাত্রিক (তারিখঃ ১৫ এপ্রিল ২০১১, ৯:৪৪ অপরাহ্ন)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন